একদন্ত ইউনিয়নে বিভিন্ন ধরনের কৃষি তথ্য সার্ভিস প্রদান করা হয়।।
যেমন। মাছ, বেগুন, ভুট্টা, পাট, চিচিংগা, গম,লাউ, পেপে, ও ঢেড়শ সহ আরও অনেক ধরনের সবজি।
নিম্নে কিছু ফসলের তথ্য ও সার্ভিস বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
১। মাছ
মাছ চাষ কর্মসূচি
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশে আমিষের চাহিদা পূরণ করার জন্য মাছ চাষ বাড়ানো দরকার। দেশের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি ও মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে ১৯৫০ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘‘মৎস্য সংরক্ষণ আইন’’। ১৯৮২, ১৯৮৫, ১৯৮৭, ১৯৮৮ ও ১৯৯৫ সালে এই আইনে কতিপয় ধারা সংশোধন,সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ মাছ চাষ ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে।
মৎস্য আইনগুলোতে মৎস্য সংরক্ষণের বিষয়ে বক্তব্য
উপরোক্ত আইন অমান্যকারীর কারাদন্ড ও জরিমানা হতে পারে।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত সেবা ও অধিকার
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১: মাছ চাষে ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান দায়িত্ব কি?
উত্তর: মাছ চাষে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, চাষ উপযোগী পুকুর খনন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যায় সহায়তা করা, মাছের পোনা সংগ্রহে সহায়তা করা, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগযোগ রক্ষা করা।
প্রশ্ন ২: ২৩ সে.মি এর নিচে মাছ ধরা নিষিদ্ধ কখন?
উত্তর:চাষের উদ্দেশ্য ব্যতীত আষাঢ়ের মাঝামাঝি হতে পৌষের মাঝামাঝি পর্যমত্ম ২৩ সেঃমি-এর চাইতে ছোট রুই, কাতল,
মৃগেল, কালবাউস এবং ঘনিয়া মাছ ধরা নিষিদ্ধ।
প্রশ্ন ৩: মুক্ত জলাশয়ে কখন মাছ ধরা নিষিদ্ধ?
উত্তর:চৈত্রের মাঝামাঝি হতে জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি পর্যমত্ম মুক্ত জলাশয়ে শোল, গজার ও টাকি মাছের পোনা ধরা নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র
ইউনিয়ন পরিষদ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল (২০০৩), এ কে শামসুল হক ও কাজী মোঃ আফছার হোসেন ছাকী (সম্পাদিত), জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট (এনআইএলজি), ২৯ আগারগাঁও, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭।
২। বেগুন
বেগুন কৃষকদের ভাগ্যে পরিবর্তন এনেছে৷ এ কথা চাঁদভা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষের মুখে মুখে৷ পাবনা জেলা শহর থেকে ১৩-১৪ কি: মি: উত্তর পশ্চিমে আটঘরিয়া উপজেলার রত্নাই নদীর ধার ঘেঁষে ছোট্ট এই ইউনিয়নটি৷ এ ইউনিয়নের গ্রামগুলো বেগুন উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে৷ ইউনিয়নে বসবাস করেন ৯০০/১০০০ জন ক্ষুদ্র চাষী৷ কম-বেশি সবাই বেগুন চাষ করেন৷ বেগুন চাষ করে এ গ্রামের মানুষ এখন স্বাবলম্বী৷ চাঁদভা ইউনিয়নে বেগুন চাষ যেন মানুষের নেশায় পরিণত হয়েছে ৷
ইউনিয়নটির প্রতিটি গ্রামের দিকে তাকালে যেদিকে চোখ যায়, দেখা যায় মাঠের পর মাঠ শুধু বেগুন ক্ষেত আর বেগুন ক্ষেত৷ পরিবারের সবাই বেগুনের ক্ষেতে কাজ করছেন৷ সেখানে প্রত্যেকের আয়ের উপায় হয়ে উঠেছে এই চাষ সংশ্লিষ্ট কাজকর্ম৷ কেউ বেগুন তুলছেন, কেউ বিক্রির জন্য সেগুলো বস্তায় ভরছেন, কেউ বা ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন৷
৩। ভুট্টা
পুষ্টিমূল্য: ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি।এতে প্রায় ১১ শতাংশ আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে।আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনোএসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমাণে আছে।এছাড়া হলদে রঙের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০মিলি গ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ থাকে।
জাত পরিচিতি: ভুট্টার জাত সংগ্রহ ও বাছাই করণের মাধ্যমে বি এ আর আই আজ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটাতে বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী ভুট্টা জাতের চাষের সম্ভবনা খুবই উজ্জ্বল।
ভুট্টার জাত
বর্ণালী: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বর্ণালী জাতটি ১৯৮৬সালে অনুমোদিত হয়।স্থানীয় জাত গুলোর চেয়ে বর্ণালী জাতের গাছের উচ্চতা বেশি।এ জাতের মোচা আকারে বেশ বড় এবং আগার দিক কিছুটা সরু।মোচার অগ্র ভাগ পর্যন্ত শক্ত ভাবে খোসা দ্বারা আবৃত থাকে।এ জাতটি রবি মৌসুমে ১৪০-১৪৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০০দিনে পাকে।ফলন প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ৫.৫-৬.০ টন এবং খরিফ মৌসুমে৪.০-৪.৫ টন হয়।
খই ভুট্টা: খই ভুট্টা জাত খই গাছ মাঝারি উচ্চতা সম্পন্ন, মোচার উপরের পাতা অপেক্ষাকৃত সরু এবং দানা আকারে ছোট।খই ভুট্টা রবি মৌসুমে ১২৫-১৩০ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৯০-১০০ দিনে পাকে।ফলন হেক্টরে রবি মৌসুমে ৩.৫-৪.০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ২.৫-৩.৫ টন হয়।খই ভুট্টার দানা থেকে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ খই পাওয়া যায়।খই আকারে বেশ বড় ও সুস্বাদু।
মোহর: ভুট্টার মোহর জাতের গাছ অন্যান্য জাতের গাছের চেয়ে বেশ উঁচু, ফলে খড়ের পরিমাণ বেশি হয়।এ জাতের মোচা পাকার পরও পাতা বেশ সবুজ থাকে বলে পাতা উৎকৃষ্ট গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।মোহর জাতের কান্ড শক্ত হওয়ায় বাতাসে সহজে হেলে পড়েনা।মোচা মোটা, লম্বা এবং সম্পূর্ণ মোচা দানায় পূর্ণ থাকে।দানা উজ্জ্বল হলুদ এবং আকারে বড়।
বারিভুট্টা-৫: নাইজেরিয়া থেকে ১৯৮৮ সালে সংগৃহীত ১০টি ইনব্রেড সারি থেকে ৫ টি বাছায় করা হয়।পরবর্তীতে ১টি অগ্রবর্তী কম্পোজিটের সঙ্গে সংকরায়ণের মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয় এবং ১৯৯৭ সালে অনুমোদন করা হয়।জাতটি বাংলাদেশে ভুট্টা চাষ উপযোগী এলাকায় চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে
বারিভুট্টা-৬: বারিভুট্টা- ৬জাতটি উদ্ভাবন করা হয় এবং ১৯৯৮ সালে।রবি মৌসুমে এ জাতের জীবন কাল ১৪৫-১৫০ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিন।এ জাতের মোচা খোসাদ্বারা ভালো ভাবে আবৃত থাকে।মোচা মাঝারি আকারের।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১: থাইল্যান্ড হতে সংগৃহীত ইনব্রেড থেকে বাছাইয়ের মাধ্যমে বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১ জাতটি উদ্ভাবিত হয়।জাতটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় উৎপাদনের উপযোগী।জীবন কাল রবি মৌসুমে ১৩৫-১৪৫ দিন ও খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিন।জাতটির দানা বেশ বড়, রংহলুদ।মোচার অগ্রভাগ ভরাট।
বপনেরসময়: বাংলাদেশে রবি মৌসুমে মধ্য-আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং খরিফ মৌসুমে ফাল্গ–ন থেকে মধ্য-চৈত্র (মধ্য ফেব্র“য়ারি-মার্চ) পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
একসময় পাট ছিল আমাদের সোনালি আঁশ। মাঝখানে নানান কারণে পাট প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছিল। কিন্তু পাটের সেই সুদিন আবার ফিরে এসেছে। ফলে পাট চাষে এখন আবারো আগ্রহী হয়ে উঠেছেন চাষি ভাইয়েরা। কারণ পাটের বাজারমূল্য এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। এই মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় পাট জাগ দেয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বিকল্প পাট জাগ দেয়ার জন্য রিবন রেটিংয়ের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগ এই বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। রিবন রেটিংয়ের সাহায্যে পাট জাগ দেয়ায় পাটের গুণগত মান ভালো থাকে। এ বছর খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকার উপসহকারী কৃষি অফিসার আশুতোষ মারফত জানা যায়, এই এলাকায় এ বছর এই পদ্ধতিতে প্রায় ১০০ একর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। চাষিরা জানান, বোরো জমিতেই পাট চাষ করা সম্ভব।
চাষকৌশল: বোরো ধান কাটার ২০-৩০ দিন আগে ধানের জমিতে জো অবস্খায় অর্থাৎ মাটিতে রস থাকা অবস্খায় বোরো ধানের জমিতে পাট বীজ বুনে দিতে হয়। মাটিতে রসের অভাব হলে একটা সেচ দিয়ে নিতে হবে। কিছু দিনের মধ্যে পাটবীজ গজাবে।
বীজেরপরিমাণ: প্রতি বিঘা জমিতে (৩৩ শতাংশ) ১০০০ গ্রাম-১২৫০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন।
জাতেরনাম: তোষা পাটবীজ।
সারেরপরিমাণ: কোনো সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই। বোরো চাষের সময় যে পরিমাণ সার ব্যবহার করা হয়েছে ওই ফসল তোলার পর যেটুকু অবশিষ্ট থাকে তাতেই পাট উৎপাদন করা সম্ভব।
পরিচর্যা: বোরো ধান কাটার পর পাটের জমিতে দুইবার নিড়ানি দিতে হবে। এতে করে আগাছা দমন হবে এবং মাটির আস্তরণ ভাঙার ফলে মাটির রস সংরক্ষিত হবে।
ফলন: এই পদ্ধতিতে চাষ করে ১০-১২ মণ বিঘাপ্রতি (কাঁচা পাটের আঁশ) ফলন পেয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় চাষ দিয়ে চাষিরা পাট উৎপাদনে ফলন ৭-১০ মণ প্রতি বিঘায় পেয়েছেন। বিষয়টি অনেকের কাছে লাভজনক বলে মনে হয়েছে।
৫। চিচিংগা
চাষাবাদ পদ্ধতি
মাটি: বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটিতে এর চাষ করা যায়৷
বীজ বোনার সময়: ফাল্গুন-বৈশাখ পর্যন্ত বীজ বোনা যায়৷
বীজের হার: এক শতকে-১০ গ্রাম, একরপ্রতি-১ কেজি, হেক্টরপ্রতি-২.৫ কেজি
জমি তৈরি: ৩-৪ টি চাষ ও মই দিতে হয় এবং পরে মাদা তৈরি করতে হয়৷
মাদার দূরত্ব: দুমিটার দূরত্বে মাদা তৈরি করতে হবে৷
মাদার আকার: ৭৫ সে. মি. বা ২.৫ ফুট চওড়া ও ৬০ সেঃ মিঃ বা ২ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করতে
হবে৷
বীজ বপন: বীজ বোনার আগে দেড় থেকে দুদিন ভিজিয়ে নিয়ে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ লাগাতে হয়৷
বীজ বায়বস্থাপনা-
বীজ শোধন-
প্রতি কেজি বীজের সাথে থাইরাম ৩ গ্রাম অথবা কার্বেন্ডাজিম ২.৫ গ্রাম ভালভাবে মিশিয়ে বুনতে হবে। এতে বীজ বাহিত রোগ ও চারার ধ্বসা প্রতিহত করা যায়।এছারা ভুষো রোগ প্রবণ অঞ্চলে প্রতি কেজি বীজের সাথে কারবোক্সিন ২.৫ গ্রাম মিশিয়ে বুনলে ভুষো রোগ দমন করা সম্ভব হয়।
বীজ বপনের হার-
সঠিক সময়ে বুনলে ১০০ কেজি/হেঃ অথবা ১০ শতকে ৪ কেজি এবং দেরিতে বুনলে (লাইনে বুনলে) ১২০ কেজি/হেঃ অথবা ১০ শতকে ৫ কেজি বীজ লাগবে।
বোনার সময়-
সেচযুক্ত জমি- সঠিক সময়ে বুনলে ১৫-৩০ শে নভেম্বর পর্যন্ত।
দেরিতে বুনলে ডিসেম্বরের প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত।
বৃষ্টিপাত নির্ভর জমি- ২৫ শে অক্টোবর থেকে ১৮ ই নভেম্বর পর্যন্ত।
বীজ বোনার দুরত্ব-
সঠিক সময়ে বুনলে এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব-২০-২৩ সেমি।
দেরিতে বোনার ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দুরত্ব-১৫-১৮ সেমি ।
বীজ বোনার পদ্ধতি-সারিতে বোনা।
বীজ বোনার গভীরতা-
গম বীজ ৪-৫ সেমি গভীরতায় বপন করতে হবে।
৭। লাউ
লাউয়ের ইংরেজী নাম gourd। শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে লাউ অন্যতম। এর পাতা সরল ও একান্তর, বোঁটা লম্বা এবং ভেতরে ফাঁপা থাকে। আমাদের দেশে অনেক ধরনের লাউ চোখে পড়ে। ফলের আকার-আকৃতি ও বর্ণের কারণে বিভিন্ন জাত নির্ণয় করা যায়। বর্তমানে সারাবছরই এ সবজিটি পাওয়া যায়। এর ব্যবহার হয় অনেক ধরনের খাবারে। তাই আগাম ফসল পেতে হলে এখনই লাউ চাষ করা দরকার।
জলবায়ু: আমাদের দেশে শীতকালে এ সবজিটি ভালো হয়। পরিবেশের দিক থেকে এটিই হচ্ছে উপযুক্ত সময়। তবে একটি বিষয় লক্ষণীয়, আলো-বাতাস এবং তাপমাত্রা ভালো ফল উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
মাটি: সব ধরনের মাটিতেই লাউ হয়। দো-আঁশ মাটিতে ফলন সবচেয়ে ভালো হয়। বেলে মাটিতে লাউয়ের ফলন পেতে হলে প্রচুর পরিমাণ জৈবসার আর পানির প্রয়োজন হবে। বর্তমানে বেলে মাটিতে লাউয়ের ভালো ফলন হচ্ছে, তা চরাঞ্চলের দিকে খেয়াল করলে বোঝা যায়।
জাত: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি লাউ-১ নামে উচ্চফলনশীল একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে লাউয়ের কোনো অনুমোদিত জাত নেই। এ জাতটি সারা বছরই চাষ করা যায়। বর্তমানে ইস্টওয়েস্ট সিড কোম্পানির হাইব্রিড লাউ মার্টিনা ও জুপিটার ব্যাপক আবাদ হচ্ছে।
মাদাতৈরি-বীজবপন: ভালো মাদা তৈরি করতে দরকার হয় উঁচু জমি। মাদায় প্রয়োজনীয় সার দেয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর প্রতি মাদায় ৩-৪টি করে বীজ বপন করতে হয়। জমিতে আইল তৈরি করে লাউয়ের চারা রোপণ করা যায়। এক্ষেত্রে আইলের প্রতি মাদায় একটি করে চারা রোপণ করতে হবে।
বীজবপনওচারাউৎপাদন: লাউ চাষের জন্য দুইভাবে বীজ বপন করা যায়। সরাসরি ক্ষেতে তৈরী মাদায় বীজ বপন করে অথবা পলিথিনের ব্যাগে চারা তৈরি করে। ৫০ ভাগ পচা গোবর অথবা জৈবসার সমপরিমাণ বেলে মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে পলিথিন ব্যাগের জন্য মাটি তৈরি করে নিতে হবে। পলিথিন ব্যাগের ব্যাস ৭.৫ সেন্টিমিটার ও উচ্চতা ১২-১৫ সেন্টিমিটার হবে। পানি বের হওয়ার জন্য ব্যাগের তলায় দুই-তিনটি ছিদ্র করে দিতে হবে। অপর দিকে সরাসরি মাদায় বীজ বপন করতে হলে প্রথমে ৩০×৩০×৩০ সেন্টিমিটার পরিমাপের মাদা তৈরি করে সার প্রয়োগ করার পর প্রতি মাদায় চার-পাঁচটি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের ১০-১৫ দিন পর প্রতি মাদায় দু’টি করে সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।
বীজবপনেরগভীরতা: ২.০-২.৫ সেন্টিমিটার। ৪-৫ দিনের মধ্যেই চারার অঙ্কুরোদ্গমন হবে।
বীজবপনেরসময়: শীতকালীন লাউ চাষের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্টের মাঝামাঝি সময়েও বীজ বপন করা যায়।
চারারোপণ: লাউ চাষের জন্য ২ী২ মিটার দূরত্বে প্রতি মাদায় দু’টি সুস্থ ও সবল চারা রোপণ করতে হয়। মাদার ওপরে মাচা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। রবি মওসুমে লাউ মাচাবিহীন অবস্থায়ও চাষ করা যায়।
মাচা: বীজ বপনের পর মাচা তৈরি করা হলে সহজে বীজের অঙ্কুরোদ্গমন হবে।
স্থানপূরণ: কোনো স্থানে চারা না গজালে বা চারা মরে গেলে সে স্থান পূরণ করতে নতুন করে বীজ বা চারা রোপণ করতে হয়।
গাছপাতলাকরণ: চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় একটি করে সুস্থ-সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।
সারেরউপরিপ্রয়োগ: সময়মতো সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
মাটিআলগাকরণ: জমির আগাছা পরিষ্কার করার সময় নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হয়। তার ফলে গাছের গোড়ার মাটি নরম এবং ঝুরঝুরে থাকে। এতে গাছের গোড়ায় আলো-বাতাস সহজে প্রবেশ করে।
বাউনিবামাচাদেয়া: গাছ যখন ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার বড় হবে তখন গাছের গাড়ার পাশে মাচা বা বাউনি হিসেবে বাঁশের ডগা কুঞ্চি পুঁতে দিতে হবে।
পরাগায়ন: সকাল বা বিকালে স্ত্রী ফুলের গর্ভকেশরের মাথায় পুরুষ ফুলের পরাগরেণু খুব আস্তে আস্তে ২-৩ বার ছুঁয়ে দিলে সহজে পরাগায়ন হয়। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৫-৬টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন করা সম্ভব।
পরিচর্যা: পানি সেচ আর বাউনি দেয়া লাউয়ের প্রধান পরিচর্যা। লাউ ফসলে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়।
আগাম ফসলের জন্য শুষ্ক মৌসুমে জমি অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। এর জন্য প্লাবন সেচ প্রয়োজন হয় বেশি। বাউনি বা মাচায় লাউ গাছ বাধাহীনভাবে যাতে বাইতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
পোকা ও রোগ দমন
অন্তর্বর্তীকালীনপরিচর্যা: লাউগাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে। তাই নিয়মিত গাছের গোড়ায় সেচ দেয়া, মাটির চটা ভেঙে দেয়া, বাউনি দেয়া ও গাছের গোড়ার শাখাগুলোও ভেঙে দেয়া বাঞ্ছনীয়। বারি লাউ-১-এর জন্য মাচা দেয়া ভালো।
মাছিওজাবপোকা: এ পোকা গাছের কচি ডগা বা পাতার রস শুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে দেয়। ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। মাছি পোকা লাউয়ের ওপর খোসার নিচে দিকে ডিম পারে। ডিম পাড়ার কয়েকদিনের মধ্যেই কীড়া রেব হয়ে আসে এবং লাউয়ের কচি অংশ খেয়ে ফেলে।
পাউডারিবাডাউনিমিলউড: এ রোগে আক্রমণ করলে গাছের পাতায় পাউডারের মতো আবরণ দেখতে পাওয়া যায়। মাটিতে রস থাকলে এ রোগ হয়। ডাউনি মিলউড রোগে গাছের পাতা বাদামি রঙ ধারণ করে। ছত্রাক আক্রমণে পাতা কুঁচকে যায়।
প্রতিকার: এ রোগের প্রতিকারের জন্য আপনার কাছের কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিন।
ফলেরমাছিপোকা: পূর্ণবয়স্ক মাছিপোকা বাদামি বর্ণের গাঢ় হলুদ দাগযুক্ত হয়ে থাকে। স্ত্রী মাছি কচি ফলের গায়ে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে পোকার কিড়া আক্রান্ত ফলের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং লাউয়ের কচি অংশ খেয়ে নষ্ট করে। ফলে আক্রান্ত লাউ পচে যায় এবং অকালে ঝরে যায়। বিষটোপ তৈরি করে এর আক্রমণ রোধ করা যায়।
কীটনাশক ব্যবহার করে এ পোকা দমন করতে হলে গাছে কচি ফল দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ডিপটেরক্স-৮০ এসপি ১.০ গ্রাম অথবা ডিপটেরক্স-৫০ ইসি ১.৫ মিলিলিটার মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করতে হবে।
জাত:শাহি পেপে ,বাবু, সিনতা, রেড লেডি হাইব্রিড।
বীজের পরিমাণ: ১২-১৫ গ্রাম/প্রতি বিঘা।
কখন চারা উৎপাদন করবেন ?
কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে পৌষের মাঝামাঝি এবং
মাঘের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের মাঝামাঝি বীজ বপনের উপযুক্ত সময়
কোথায় চারা উৎপাদন করবেন ?
পলিথিন ১০ সে.মি. আকারের পলিথিন ব্যাগে ২ ভাগrব্যাগে চারা উৎপাদন করবেন। এজন্য ১৫ পচা গোবর + ২ভাগ মাটি + ১ভাগ বালি দ্বারা ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করতে হবে। বীজ বপনের আগে রিডোমিল স্প্রে করুন।বীজ বপনের আগে হালকা রোদে বীজগুলি -২ ঘন্টা রেখে দিন অত:পর বপনের ২৪ ঘন্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে,পানি ঝরিয়ে ভেজা কাপড়ে মুড়ে উষ্ণ স্থানে রাখুন।২-৩ ঘন্টা পর প্রতিটি পলি ব্যাগে টাটকা সংগৃহীত বীজ হলে ১টি করে আর পুরাতন হলে ২-৩টি বীজ (তবে খেয়াল রাখতে হবে বীজ যেনো সু¯্য’ সবল ও রোগমুক্ত হয়) বপন করে হালকা পানি দিয়ে ছায়াযুক্ত ও বাতাস চলাচল করে এমনস্থানে রাখুন। ব্যাগে একের বেশি চারা রাখা উচিত নয়। ২০-২৫ দিন বয়সের চারার ১-২% ইউরিয়া ¯েপ্র করলে চারার বৃদ্ধি ভালো হয়।নিয়মিত হালকা পানি সেচ দিতে হবে।
মাদায় সার প্রয়োগ ও চারা রোপন পদ্ধতি
মাদায় চারা রোপণ:
মাদায় প্রয়োগ
সারের নাম পরিমাণ
ভার্মি কম্পোষ্ট ২ কেজি
পচা গোবর সার ৬ কেজি
সরিষার খৈল ৫০ গ্রাম
টি.এস.পি ৪০০ গ্রাম
জিপসাম ২৫০ গ্রাম
বোরণ ৩০ গ্রাম
জিংক সালফেট/দস্তা সার ২০ গ্রাম
উপরি সার প্রয়োগ
গাছে নূতন পাতা আসলে
১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি
ইউরিয়া ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম
এম.ও.পি ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম
গাছে ফুল আসলে
১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি
ইউরিয়া ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
এম.ও.পি ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
অন্তর্বর্ত্তীকালীন পরিচর্যা
০৯। ঢেঁড়শ
ঢেঁড়শ এদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমান ভিটামিন নিওসি এবং এছাড়া ও পর্যাপ্ত পরিমানে আয়োডিন, ভিটামিন“এ“ ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে। ঢেঁড়শ নিয়মিত খেলে গলা ফোলা রোগ হবার সম্ভাবনা থাকেনা এবং এটা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ও সহায়তা করে।
মাটি
দোআশ ও বেলে দোআশ ঢেঁড়শ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকলে এটেল মাটিতেও চাষ করা যায়
জাত
শাউনি, পারবনিকানি-, বারীঢেঁড়শ, পুশাসাওয়ানী, পেন্টাগ্রীন, কাবুলীডোয়ার্ফ, জাপানী প্যাসিফিক গ্রীন এ সব ঢেঁড়শের চাষ উপযোগী জাত।শেষের দুটো জাত সারা বৎসর ব্যাপী চাষ করা চলে
সময়
সারা বছরই চাষ করা যায়।তবে সাধারণতঃ গ্রীষ্ম কালে এর চাষ করা হয়।ফাল্গুন চৈত্র ও আশ্বিন-কার্তিক মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
বীজেরপরিমাণ
প্রতি শতকে ২০গ্রাম, হেক্টর প্রতি৪- ৫ কেজি বীজ লাগে।
বীজবপন
বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হয়।গভীর ভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুর ঝুরে করে চাষের জমি তৈরি করতে হয়।মাটি থেকে সারির দুরত্ব হবে ৭৫ সেমি.।বীজ সারিতে ৪৫ সেমি. দূরে দূরে ২-৩ টি করে বীজ বুনতে হয়।জাত অনুযায়ী চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দুরত্ব ১৫ সেমি. কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে।শীত কালে গাছ ছোট হয় বলে দূরত্ব কমানো যেতে পারে।চারা গজানোর পর প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ্য সবল চারা রেখে বাকী চারা গর্ত থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে।
সারেরপরিমাণ
সার এক শতকে হেক্টর প্রতি
গোবর ৭৫ কেজি ১৮ টন
সরিষার খৈল ১.৭৫ কেজি ৪২৫ কেজি
ইউরিয়া ২৩০ গ্রাম গ্রাম ৫৫-৬০ কেজি
টিএসপি ৩৫০ গ্রাম গ্রাম ৮৫-৯০ কেজি
এমওপি ২৩০ গ্রাম গ্রাম ৫৫-৬০ কেজি
পরিচর্যা
নিড়ানী দিয়ে মাটির উপরিভাগ মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে।জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
বীজ বোনার৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে এবং ফুল ফোটার ৩-৫ দিনের মধ্যে ফল আসা শুরু হয়।জাত ভেদে ফল ৮-১০ সেমি. লম্বা হলেই সংগ্রহ করতে হয়।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS